মোঃ জহিরুল ইসলামঃ বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও মহিলা মহাজোট উদ্যোগে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পূণঃ প্রতিষ্ঠার দাবীতে শনিবার ১১ মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে দুপর ১ টায় বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানব বন্ধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় হিন্দু মহাজোট বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মানবচন্দ্র মিত্র, জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও মহিলা মহাজোট বরিশাল জেলার সভাপতি সুচিত্রা দেবনাথ, জাতীয় হিন্দু মহাজোট বরিশাল বিভাগীয় সম্পাদক রিপন চন্দ্র দাস, জাতীয় হিন্দু মহাজোট বরিশাল জেলার সভাপতি তাপশ মিত্র, জাতীয় হিন্দু মহাজোট বরিশাল প্রতিনিধি প্রদিপ কুমার জয়, জাতীয় হিন্দু মহাজোট বানরীপাড়া উপজেলা শাখার রনজিৎ কুমার শীল সহ আরও উপস্থিত ছিলেন শম্পা রানী শীল, পুস্পা রানী মিত্র ও মিলন দাস।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মানব চন্দ্র মিত্র তিনি বলেন দেশ স্বাধীনতার পর হতেই ব্যাপকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন, নিপিড়ন, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগে, মঠ-মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর, জমি দখল, কিশোরী অপহরণ, ভয় ভীতি সহ নানা কারনে দেশের হিন্দু সম্প্রদায় দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। ক্রমাগত দেশত্যাগের কারনে দেশ হিন্দু শুন্য হওয়ার পথে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পূর্বে এই ভূখন্ডে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৩৩%, পাকিস্তান আমলে তা নেমে দাঁড়ায় ২২% এ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে প্রথম আদম শুমারীতে হিন্দুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩.৫%, ২০১৫ সালে ১০.৭%, ২০২২ সালে মাত্র ৭.৯৫%। ২০১৫ সাল থেকে মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে সরকারি পরিসংখ্যান মতে হিন্দুর সংখ্য কমেছে ২.৮%। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে এদেশে অচিরেই হিন্দু শূন্য হবে তা বলাই বাহুল্য। অথচ জাতীয় সংসদ সর্বদাই নিরব ভূমিকা পালন করছে।
জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও মহিলা মহাজোট বরিশাল জেলার সভাপতি সুচিত্রা দেবনাথ তিনি বলেন বর্তমানে বাংলাদেশের সংসদে ১৬ জন হিন্দু এমপি থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের সমস্যা নিরসনে তাদের কোন ভূমিকা নাই। অর্থাৎ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করার মত কোন সংসদ জাতীয় সংসদে নেই। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাতিলের দাবীতে গড়ে উঠা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদেও দাবী ছিল ” রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাতিল চাই, ৭২ এর সংবিধান ফেরৎ চাই।”
দেশে মানবাধিকার কমিশন আছে। অতীতে বিভিন্ন সময় বহু কমিশন হয়েছে কিন্তু সে সব কমিশনের ফলাফল শূন্য। অর্থাৎ কোন কমিশন হিন্দু সমাজের কোন কাজে আসে নাই। সারাদেশে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে হিন্দুদের উপর ব্যপকভাবে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ঐক্য পরিষদের গুটিকয়েক নেতা সমগ্র হিন্দু জাতিকে ভিকটিম হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের সুযোগ সুবিধা আদায় করেছে।
জাতীয় হিন্দু মহাজোট বরিশাল জেলার সভাপতি তাপস মিত্র তিনি বলেন দেশের হিন্দু নেতৃবৃন্দ ইতিহাস, দর্শন ও পৃথিবীর সর্বজনমান্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমত পর্যালোচনা করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সূত্র পযালোচনা করে “জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা” প্রতিষ্ঠাই সংখ্যালঘু সমস্যার একমাত্র সমাধান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অতীতে ১৯০৯ সালে অভিভূক্ত ভারতে মুসলিম সম্প্রদায় পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা দাবীর প্রিক্ষিতে ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠান পর ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল।
জাতীয় হিন্দু মহাজোট বরিশাল বিভাগীয় সম্পাদক রিপন চন্দ্র দাস তিনি বলেন এদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পূণঃ প্রতিষ্ঠিত হলে হিন্দু সমস্যার সমাধান হবে। সে কারনে হিন্দু মহাজোট শুরু থেকেই জাতীয় সংসদ সহ সর্বস্তরে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পূণঃ প্রতিষ্ঠার দাবীতে মিছিল মিটিং গণস্বাক্ষর স্মারক লিপি পেশ সহ নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে। ফলে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পূণঃ প্রতিষ্ঠা এখন জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়েছে।
Leave a Reply