আরিফঃ মুফতি মুহাদ্দিসরা? শায়খ-আল্লামারা? মুফাসসির দরবেশরা? মোটেও নয়। এই কাজটি করেছিলেন আল্লাহর রসুলের ওইসব সাহাবীরা যাদের মধ্যে লেখাপড়া জানতেন হাতে গোণা মাত্র কয়েকজন ব্যক্তি। অধিকাংশ সাহাবীই আরবি মাখরাজ, আরবি ব্যাকরণের পণ্ডিত হওয়া দূরের কথা লিখতে পড়তেই জানতেন না। এমনও ছিলেন যে, এক হাজারের উপরে সংখ্যা আছে সেটাই জানতেন না। তারা কি হাদিসের বই পড়ে পড়ে ইসলাম শিখেছেন? মোটেও নয়। হাদিস নামের কোনো বইয়ের অস্তিত্বই ওই সময় ছিল না। হাদিস তো তারা সবেমাত্র রচনা করছেন কর্মে, কথায়, সংগ্রামে ও কোর’বানিতে।
সমগ্র কোর’আন তারা অধিকাংশই কোনোদিন চোখে দেখেননি। তাফসির কী জিনিস কেউ জানতেনই না, এটির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্কই ওই যুগে ছিল না, বরং কোর’আনের আয়াতের অর্থ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বা অতিরিক্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে মনে করা হত অত্যন্ত খারাপ কাজ, দীনের জন্য ক্ষতিকর কাজ। আল্লাহর রসুল বলেছেন এটি ‘কুফর’।
অর্থাৎ তাফসির নাই, হাদিস নাই, আরবির ব্যাকরণ-মাখরাজের জটিল জটিল ধারা-উপধারা নাই, কিছুই নাই, আছে শুধু একটি কথা- আসমাউ ওয়া আত্তাবিয়্যু, শুনলাম এবং পালন করব। আল্লাহর রসুল যা বলতেন তাই তারা আসমাউ ওয়া আত্তাবিয়্যু বলে পালন করতেন। ডাইনে বলে ডাইনে যেতেন, বামে বললে বামে যেতেন। সামনে বললে সামনে, পেছনে বললে পেছনে। হ্যা, এই একটিমাত্র শিক্ষা ওই জাতির ধনী-গরীব, মূর্খ-জ্ঞানী, সাদা-কালো, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবার মধ্যে এমনভাবে কায়েম হয়েছিল যেন সেই জাতিটি নিছক একটি জাতি নয়, সেটি একটি আর্মি। প্রত্যেকটি সদস্য সৈনিক, আর হজরত মোহাম্মদ (সা.) হলেন তাদের কমান্ডার। আল্লাহর রসুল যা-ই বলেন তাই হয়ে যায়। কোনো দ্বিধা নাই, প্রশ্ন নাই, শর্ত নাই।
আল্লাহর রসুল চলে গেলেন। জাতির কমান্ডার হলেন আবু বকর (রা.)। আবু বকর (রা.) চলে গেলেন জাতির কমান্ডার হলেন ওমর (রা.)। এভাবে যতদিন জাতি এক নেতার অধীনে ঐক্যবদ্ধ থেকে কেবল ‘আসমাউ ওয়া আত্তাবিয়্যু’ করে গেছে, ততদিন এই জাতির সামনে কোনো অত্যাচারী অপশক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। কেউ তাদেরকে পরাজিত করতে পারেনি। কেউ তাদের নারীদেরকে ধর্ষণ করতে পারেনি। কেউ তাদের দেশকে দখল করতে পারেনি। কেউ তাদেরকে উদ্বাস্তু করতে পারেনি। চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু জাতির ঐক্য, শৃঙ্খলা আর আনুগত্যের মোকাবেলায় শত্রুরা হয়েছে পরাজিত, পর্যুদস্ত।
আজ আর সেই দিন নেই মুসলিম জাতি এখন শতধা বিভক্ত তাদের কোন একক নেতৃত্ব নেই। ১৬০ কোটি মুসলিম ৫২টি দেশে বিভক্ত। সারা দুনিয়ায় তারা আজ ঘৃনিত মূল্যহীন, সিরিয়া ইরাক লিবিয়া প্যালেস্টাইন ইয়েমেন ফিলিপাইন ভারত মায়ানমার বসনিয়ায় মুসলিমরা আজ গৃহহীন যুদ্ধবিধ্বস্ত ধর্ষিত ইউরোপের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কোটি কোটি লোক উদ্বাস্তু। দেখে মনে হয় ব্যাপারটা যেন একদম স্বাভাবিক। আমাদের বিবেক যেন মরে গেছে এক টুকরো রুটির জন্য ওরা হাহাকার করছে। আর আমরা কামড়াকামড়ি করছি তারাবির নামাজ ৮ রাকাত না ২০ রাকাত, নবী নূরের তৈরি নাকি মাটির তৈরি, তুই কাদিয়ানী তুই শিয়া মতের মিল না হলে কাফের মুরতাদ মুশরেক এগুলোতো সাধারণ ব্যাপার, ফতোয়া দেওয়া যেন ওদের বাপ দাদার চৌদ্দগুষ্টির অধিকার যা কখনোই আল্লাহ তরফ থেকে বলা হয়নি।
কোরআনের কথার চাইতে হাদীসের কথার আধিক্য মাযহাব মানহাজ নামে নতুন নতুন ফিরকা সুফিবাদ পীরবাদ পাগলা বাবা আরো কত কি?
এই অবস্থার পরিবর্তন কবে কিভাবে হবে?
Leave a Reply