স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল;
সরকারি দলের ছাত্র বা যুব সংগঠনের নেতা-কর্মী মানেই সাত খুন মাফ আর টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলদারি লাইসেন্স হাতে পাওয়া। টাকা কামাই করার এর চেয়ে সহজ পথ আর কী আছে?
বরিশাল সদর উপজেলায় ৩৬ বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের জন্য উম্মুক্ত নিলামের আহ্বান করেন বরিশাল সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি গত ৪ জুন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
প্রকাশ্য নিলামের জন্য দুটি দিন ধার্য্য করা হয়। মহানগরের ১৮ টি স্কুলের জন্য ১৪ তারিখ সকাল ১০ টায় ও সদর উপজেলার ১৮ টি স্কুলের জন্য ১৫ তারিখ সকাল ১০ টা নির্ধারন করা হয়। প্রকাশ্য নিলাম উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
মহানগরের ১৮ স্কুলের উম্মুক্ত নিলামের
১৪ জুন উপজেলা পরিষদের হল রুমে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়ে। এতে কারচুপির অভিযোগ করেন ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রশাসনের সামনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রভাবে কোন ব্যবসায়ী দরপত্র কিনতে পারেনি। তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বাঁধা দিয়ে রেখেছেন।
নিলামে অংশগ্রহণ করতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন ১৪ জুন নামে মাত্র মূল্য দিয়ে ১৮ টি স্কুল সিন্ডিকেট তৈরি করে নিয়ে গেছে বরিশাল সদর আসনের এমপি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা প্রিন্স সরদার, আ.লীগের সমর্থক টিপু, যুবলীগের বাবলু জমাদ্দার, রিয়াজ, মামুন সহ অন্তত ২০ জন। তাদের কারচুপির জন্য সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারিয়েছে। উম্মুক্ত নিলাম বাদ দিয়ে পুনোরায় ১৮ টি স্কুলের বাক্সে দরপত্র আহ্বান করার অনুরোধ রইলো নিলাম কমিটির কাছে। সর্বচ্চো দরদাতা কাজ পেলে সরকারের রাজস্ব হারাবে না।
প্রথম দিনে টেন্ডার অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার ধারাবাহিকতায় ১৫ তারিখ টেন্ডারে কারচুপির জন্য সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি চেষ্টা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। ১৮ টি দরপত্রের মধ্যে ২ টি দুটি দরপত্রে কারচুপি করে নিয়ে গেছে। নিলাম কমিটি সদস্যরা ও পুলিশ নিরাব ভুমিকায় ছিলো। তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনওর হস্তক্ষেপে ঘোষণা করা দুটি দরপত্র সকলের মতামতে বাতিল করে পুনোরায় নতুন সুষ্ঠ ভাবে উম্মুক্ত দরপত্র বিক্রয় হয়।সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিলামে অংশগ্রহণ করেন।
অভিযোগ করে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন ১ম দিন আমি সহ ১০ জন ব্যবসায়ী উম্মুক্ত নিলামে অংশ গ্রহণ করতে আসছি। কিন্তু আমাদের কাউকে দরপত্র কিনতে দেয়নি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। ২য় দিন একই কাজ চালায় তারা, পরবর্তীতে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিলে তার হস্তক্ষেপে সবার অংশগ্রহণে উম্মুক্ত দরপত্রের কাজ সম্পন্ন হয়।
উম্মুক্ত নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রশাসনের সামনে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা এভাবে ব্যবসায়ীদের লাঞ্ছিত করে পেশি শক্তির প্রভাব দেখিয়ে। প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। উম্মুক্ত নিলামের নামে নাটক না করে। প্রশাসন আগেই ডেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে টেন্ডার দিয়ে দিলেই পারতো। ব্যবসায়ীদের ডেকে সময় নষ্ট করার তালবাহানা না করলেই পারতেন বলেন অভিযোগ করেন উম্মুক্ত দরপত্র কিনতে আসা ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান মিলন।
উম্মুক্ত নিলামে কারচুপির বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন। গত ১৪ জুনের মহানগরে ১৮ টি স্কুলের উম্মুক্ত নিলামে
কারচুপির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হতো। ১৫ জুন সদর উপজেলার ১৮ টি স্কুলের উম্মুক্ত নিলামে কিছু ব্যক্তিকে দরপত্র কিনতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক সমাধান করে সকলের উম্মুক্ত নিলামে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়।
কারচুপির বিষয়ে কেউ লিখত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দরপত্র নিয়ে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। কোনো ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা বা কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীমের নাম ভাঙ্গিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগের টেন্ডারবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রতিমন্ত্রীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিক ফোন কল করলেও রেসপন্স পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply